ইসলামিক গল্প - ধৈর্যের পরিক্ষার ফল মধুর হয়। .
এক প্রাচীন সময়ে, একটি ছোট গ্রামে জাফর নামে এক যুবক বাস করতেন, যার জীবন ধৈর্যের পরীক্ষা ও সংগ্রামের এক অনন্য উদাহরণ ছিল। জাফরের বাবা ছিলেন একজন কৃষক, মা ছিলেন গৃহিণী। সংসারে অভাব অনটনের মধ্যেও তারা সবসময় আল্লাহর উপর ভরসা রাখতেন এবং ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতেন।
জাফর নামাজ পড়ত এবং আল্লাহ কে বিশ্বাস করতো।
একদিন জাফরের জীবনে এমন একটি পরীক্ষা আসে যা তার ধৈর্যের সীমানা পরীক্ষা করে। গ্রামের পাশে একটি নদী ছিল, যেখানে হঠাৎ করে বন্যা আসে এবং জাফরের পরিবারের সমস্ত ক্ষেত ও ফসল নষ্ট হয়ে যায়। বন্যার পর জাফর এবং তার পরিবার প্রায় নিঃস্ব হয়ে যায়। অভাবের সংসারে আরও অভাবের ছায়া ঘনীভূত হয়।
এই দুর্যোগের মধ্যেও জাফরের মা তাকে বলেন, “ধৈর্য ধর, আমাদের পরীক্ষা হচ্ছে। আল্লাহ যদি চান, তাঁর রহমতে আবার সব ঠিক হয়ে যাবে।” জাফর তার মায়ের কথা শুনে নদীর ধারে যান এবং প্রার্থনা করেন যেন তারা এই দুর্যোগ থেকে উত্তরণ পায়।
সেই থেকে জাফর নদীর পাড়ে প্রতিদিন গিয়ে ধ্যান করতেন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করতেন। দিনের পর দিন, তার ধৈর্য ও আস্থার পরীক্ষা চলতে থাকে। এক দিন, নদীর ধারে বসে আছেন, তখন এক বৃদ্ধ পথিক এসে তার পাশে বসেন। বৃদ্ধজন তাকে জিজ্ঞাসা করেন, “তুমি এখানে কী করছ?”
জাফর তার সমস্যা এবং ধৈর্যের পরীক্ষা সম্পর্কে বৃদ্ধকে বলেন। বৃদ্ধ তাকে একটি উপদেশ দেন, “যে বিপদের মধ্যেও আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখে, সে কখনও হেরে যায় না। আল্লাহ সবার পরীক্ষা নেন, কিন্তু তাঁর কাছে ধৈর্য অন্যতম উত্তম গুণ।”
বৃদ্ধের কথা শুনে জাফরের মনে আশা ও সাহস জন্ম নেয়। তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন যে তার ধৈর্য ও আস্থা আরো দৃঢ় হবে। বৃদ্ধ তাকে আরো বলেন, “একটি গাছ যখন বাতাসে নুয়ে পড়ে তখন তার শিকড় আরো গভীরে প্রবেশ করে এবং শক্ত হয়ে ওঠে। তোমার বিপদও তোমাকে শক্তিশালী করবে যদি তুমি তা থেকে শিক্ষা নাও।”
পরবর্তী কয়েক মাসে, জাফর ও তার পরিবার নতুন করে কাজে লাগলেন। তারা ধ্বংস হওয়া ফসলের মাঠ পরিষ্কার করে নতুন ফসল লাগানো শুরু করেন। জাফর গ্রামের অন্যান্য মানুষকেও সাহায্য করতে থাকেন এবং তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। ধীরে ধীরে তার পরিবারের অবস্থা পুনরুদ্ধার হতে থাকে।
সেই সময়ে গ্রামে এক ব্যবসায়ী আসেন, যিনি জাফরের সততা ও পরিশ্রম দেখে মুগ্ধ হন। তিনি জাফরকে তার ব্যবসায়ে একটি দায়িত্ব দেন। জাফরের নতুন কাজে তার পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং ধৈর্য তাকে শীঘ্রই সফলতার শিখরে নিয়ে যায়।
বছর গড়িয়ে, জাফর একজন সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হন। তিনি তার গ্রামে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন এবং গ্রামের শিক্ষার উন্নতির জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তার জীবন থেকে অন্যান্যরা শিক্ষা নেয় যে, ধৈর্য এবং আস্থা যে কোনো বিপদ মোকাবেলায় সর্বোত্তম অস্ত্র।
গল্পের শেষে, জাফর তার জীবনের গল্প তার নাতি-নাতনিদের শোনান এবং তাদের উপদেশ দেন যে তারা যেন সবসময় আল্লাহর উপর ভরসা রাখে এবং ধৈর্য ধারণ করে। তিনি বলেন, “আমাদের জীবনের প্রতিটি পরীক্ষা আসলে আমাদের আরো শক্তিশালী করে তোলে, যদি আমরা তা থেকে সঠিক শিক্ষা নিতে পারি।”
পোস্ট টি ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন।
RAZU BD TECH